মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও তার ২৩ নাবিক দেশে ফিরে আসছেন। জানা গেছে, এখন তারা ভারত মহাসাগরের অবস্থান করছেন। তবে সাগরের এই অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। সোমালীয় জলদস্যুদের অন্য কোনো গ্রুপ আবারও হামলা চালাতে পারে এমন শঙ্কায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি স্পেন ও ইতালির নৌবাহিনীর স্কর্টে ভারত মহাসাগরের এই ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অতিক্রম করছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’।
তবে এর আগে জলদস্যুদের আক্রমণের সময় বারবার সহযোগিতা চেয়ে স্পেন-ইতালিসহ অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি জাহাজটির ২৩ নাবিক। এখন কৃতিত্ব নিতে প্রতিযোগিতা চলছে দেশগুলোর।
জানা গেছে, সোমালীয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে উপকূল ত্যাগ করে ভারত মহাসাগর অংশে পৌঁছাতেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের আশপাশে অবস্থান নেয় অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কয়েকটি বোট। এরপর এসব দেশের নৌসদস্যরা জাহাজটিতে উঠে আসেন। এ সময় তারা নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের নাবিকদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। অবশ্য জাহাজের নাবিকরা আগে থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে উল্লাস করছিলেন।
মুক্তিপণ দিয়ে ফেরার পথে ভারত মহাসাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অতিক্রমের সময় সোমালীয় জলদস্যুদের অন্য কোনো গ্রুপ হামলা চালানোর শঙ্কায় নৌসদস্যরা এ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানান মেরিন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে কেএসআরএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, ছটি যুদ্ধ জাহাজ ঘিরে রেখেছে এমভি আবদুল্লাহকে। তারাও একটি মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। আমাদের মতো চারটি দেশের নৌবাহিনীর তাগিদ ছিল, যাতে তাড়াতাড়ি ওই ইস্যুটা সমাধান করা যায়। এ কারণে আল্লাহর রহমতে আমরা এ ইস্যুটা দ্রুত সমাধান করতে পেরেছি।
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, আমেরিকার একটা কন্ডিশন আছে; একটি ডলার নিতে হলেও তাদের সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। ওটা আমাদেরও নিতে হয়েছে। এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল কাজে তাদের অনেক অ্যাসোসিয়েটের সমন্বয় করতে হয় বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ বিকেলে সোমালিয়া উপকূল থেকে অন্তত সাড়ে ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এসে এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাই করেছিলো জলদস্যুরা। এ সময় জলদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেতে জরুরি বার্তা দিয়েছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো সহায়তা করেনি।
পরবর্তীতে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছার পর আক্রমণ করে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনার পরিকল্পনা করলেও তাতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। সর্বশেষ শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে জলদস্যুদের কাছে বিমানে করে পৌঁছানো হয় মুক্তিপণের ডলার ভর্তি তিনটি ব্যাগ। অর্থ পেয়েই মধ্যরাতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা।